গতানুগতিক পদ্ধতির পরিবর্তে স্টিল দিয়ে ভবন নির্মাণ করে শত মানুষের স্বপ্ন পূরণ করার দায়িত্ব নিয়েছে অ্যাডভেন্ট স্টিল এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোম্পানীটি কাজ করে উদ্যোক্তাদের সাথে সরাসরি। মাত্র আড়াই বছরেই কাস্টমারদের মন জয় করেছে চমৎকার এই কোম্পানীটি অসাধারণ ডিজাইন, সময় মত প্রোজেক্ট ডেলিভারী, কাস্টমারদের ডিমান্ড অনুযায়ী সবচেয়ে মান সম্মত কাঁচামাল সরবরাহ করণ এর মাধ্যমে। অ্যাডভেন্ট স্টিল এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হলেন ইমদাদ হোসাইন খান । তার সাথে কথা হয়েছিলো কোম্পানিটির পথচলা নিয়ে। কিভাবে এত অল্প সময়ে এতদূর এলো এবং কোম্পানী নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পণা কি সে বিষয়েই আলোকপাত করলেন মিঃ ইমদাদ ।

বিনির্মাণ

আপনার কোম্পানী সম্পর্কে কিছু বলুন।

ইমদাদ হোসাইন খান

আমাদের কোম্পানী অ্যাডভেন্ট স্টিল এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড মূলত একটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপার কোম্পানি। ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরির ক্ষেত্রে আমাদের মূল কাঁচামাল হচ্ছে প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল। এই সেক্টর বাংলাদেশে কাজ শুরু হয় মোটামুটি দশ থেকে পনের বছর আগে। কিন্তু গত  ছয় থেকে সাত বছরে এই ইন্ডাস্ট্রিটা অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে । এখন বড় বড় ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রোজেক্টের কাজ হচ্ছে প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল দিয়ে। ট্র্যাডিশনাল যে রিয়াল স্টেট ডেভেলপমেন্ট হয় যেটাকে আমরা সংক্ষেপে বলি আরসিসি, সেখানে মুলত রেডিমেড কংক্রিট দিয়ে ভবন তৈরি করা হয়। দীর্ঘদিন যাবত এই সিস্টেমেই বাংলাদেশের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্টের কাজ গুলো চলে আসছিলো

কিন্তু প্রি ফেব্রিকেটেড স্টিল দিয়ে কারখানা অথবা কমার্শিয়াল বিল্ডিং তৈরির যে কালচার সেটা বেশিদিন হয়নি বাংলাদেশে শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই ট্র্যাডিশনাল মার্কেট কব্জা করা শুরু করেছে এই সিস্টেমটি। এটার বড় একটা কারন হচ্ছে ট্র্যাডিশনাল রেডিমেড কংক্রিট দিয়ে বিল্ডিং বানানোর চেয়ে স্টিল দিয়ে বিল্ডিং বানানো অনেক বেশি সাশ্রয়ী এবং স্টিলের যেহেতু রিসেল ভ্যালু থাকে শতভাগ, পরবর্তীতে যদি ভবনটাকে ভেঙ্গে ফেলতে চায় অথবা অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে চায় তবে তা সহজেই সম্ভব। প্রোজেক্ট সফলতার সাথে সম্পূর্ণ হতে সময়ও লাগে  যথেষ্ট কম। আরসিসি কাঁচামাল দিয়ে একটা প্রোজেক্ট করতে যেখানে এক বছর সময় লাগে, প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল দিয়ে সেই একই কাজ করতে সময় লাগে সর্বোচ্চ চার থেকে পাঁচ মাস।

প্রত্যেক উদ্যোক্তাই চায় তার কারখানা, অফিস অথবা প্রয়োজনীয় স্থাপনা যতদ্রুত সম্ভব তৈরি করে মূল কাজে ফিরে যেতে। সেটা আমরা সঠিক ভাবে ডেলিভার করতে পারছি বলেই আমরা আমাদের কাস্টমারদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি খুব অল্প সময়ে। এবং এটা আমাদের কাস্টমারদের জন্য অসাধারন কিছু ভ্যালু প্রপজিশন এর মধ্যে অন্যতম একটি ।

বিনির্মাণ

আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে কিছু বলুন।

ইমদাদ হোসাইন খান

আমার পড়াশুনা শেষ করেছি সেন্ট্রাল কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি এবং ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে। পড়াশুনাতে থাকাকালীন সময়ে আমি আমার ক্যারিয়ার শুরু করি টেকনোলজি সেলস এবং মার্কেটিংয়ে । যেহেতু সেলস আমি সবসময়ই ভালোবাসতাম সেজন্য ফিন্যান্সিয়াল সাবজেক্টে পড়াশুনা করেও এই সেক্টরে আমি আমার ক্যারিয়ার শুরু করিনি। আমার ক্যারিয়ারের শুরুটা হয় আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেডে  করপোরেট সেলসে কাজ করার মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে এভ্রি ডেনিসন, ব্র্যাক আইটি সার্ভিস, এডিএন টেলিকম এবং এস এস এল ওয়্যারলেসে আমি কাজ করেছি বিভিন্ন পদে। ম্যানেজমেন্টের সর্বনিম্ন পদ থেকে সর্বোচ্চ পদে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। একটা পর্যায়ে আসার পর থেকে আমি এবং আমাদের বোর্ডে যারা আছেন সবাই চিন্তা  করলাম দেশের যে সেক্টরগুলো পিছিয়ে আছে সেখানে ইমপ্যাক্ট তৈরি করে এমন কি কি করা যায়। তারই প্রেক্ষিতে আসলে অ্যাডভেন্টের জন্ম এবং এর সাথে আমি কাজ করা শুরু করি প্রায় আড়াই বছর আগে।

বিনির্মাণ

আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে কিছু বলুন।

ইমদাদ হোসাইন খান

আমাদের ফাইনাল প্রোডাক্ট হচ্ছে একটি সফল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপ করে দেয়া। এটি করার জন্য অন্যান্য যেসব সার্ভিস আমাদের দেয়ার প্রয়োজন হয় তার সবই আমরা দিয়ে থাকি। কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে, সার্ভে করা, ডিজাইন এবং প্রয়োজনীয় টেকনিকাল কনসাল্টেন্সি দেয়া, প্রোজেক্ট ম্যানেজ করা এবং ফাইনালি একটা ফিনিশড প্রোডাক্ট উপহার দেওয়া। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যেহেতু আমরা ফ্যাক্টরি বিল্ড করি, সেক্ষেত্রে বলতে পারি একজন উদ্যোক্তার ব্যবসায়িক ভাবে সফল হওয়ার যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্নটাকেই আমরা পরের ধাপে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করি। কারন একটা ভালো ফ্যাক্টরি তার ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক সাফল্যকে নির্ধারণ করে।

বিনির্মাণ

অ্যাডভেন্ট স্টিলের বিজনেস গ্রোথ কেমন?

ইমদাদ হোসাইন খান

আসলে আমরা শুধু বিজনেস গ্রোথের কথা চিন্তা করে কাজ করিনি। আড়াই বছর আগে যখন আমরা শুরু করি তখন বিলট্রেডের মত কোম্পানি মাঠে ছিলো। এই কঠিন সেক্টরে আমরা শুধু একটা উদ্দেশ্য নিয়েই কাজ শুরু করেছি সেটা হচ্ছে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে যত ধরণের উদ্যোক্তা আছেন তাদের কিভাবে কম খরচে এবং স্বল্প সময়ে স্মার্ট এবং টেকনোলজিকালি আপডেটেড  একটি কারখানা তৈরি করে দেয়া যায় । সাথে দেশীয় ইনফ্র্যাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্টের গতানুগতিক কালচারকে বদলে দেয়ার একটা জেদ আমাদের মধ্যে ছিল। ট্র্যাডিশনাল রিয়াল স্টেটের মাধ্যমে সুযোগটা খুব কম ছিলো, সেজন্যই স্টিলের মত একটা প্রোডাক্ট  নিয়েছি যাতে খুবই কম সময়ে আমরা ডিফরেন্ট কিছু করতে পারি । যদি গ্রোথের ব্যাপারে বলি তাহলে আমাদের কোম্পানি শুরু থেকে প্রতি বছরই ডাবল ডিজিট গ্রোথ দেখেছে । এটি আমাদের শক্তি দেয় কাস্টমারদের আস্থার সঠিক প্রতিদান দেয়ার।

বিনির্মাণ

আপনার বিজনেস মডেল কী? প্রফিট জেনারেট কিভাবে করেন?

ইমদাদ হোসাইন খান

আমাদের বিজনেস মডেল খুব বেশি ডিফরেন্ট কিছু নয়, আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের সাথে খুব ক্লোজলি কাজ করি এবং সবচেয়ে আধুনিক টেকনোলজি ও আইওটি সংযুক্ত কারখানা আমরা তৈরি করি যেটা অন্য কেউ এখনো করেনা। আমাদের দক্ষ সাপ্লাই চেইন এবং প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট আমাদেরকে সব সময় ভালোভাবে বিজনেস পরিচালনা করতে সাহায্য করে।

বিনির্মাণ

আপনার বিজনেসের সেলস এবং মার্কেটিং স্ট্রাটেজি কী?

ইমদাদ হোসাইন খান

আমাদের সেলস গুলো এখনো রেফারেন্সের মাধ্যমেই হয়। আমাদের একটা প্রোজেক্ট আরো দুই থেকে তিনটা প্রোজেক্ট এনে দেয়। ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট এমন একটি বিষয়, যা তৈরি করার পর সবাই প্রথম দেখার সাথে সাথেই একটি ধারণা তৈরি করে ফেলে সেই প্রোডাক্ট এর ব্যাপারে । আমরা চেষ্টা করি সেই ধারণাটি যেন একটি অসাধারণ ভাল লাগার ধারণা হয়।ফ্যাক্টরি তৈরি করার পর সেটা যদি উঁচু মানের হয় কোয়ালিটির দিক দিয়ে এবং দেখতে সুন্দর হয় তখন অন্যান্য উদ্যোক্তারা সেটি দেখেই সবার আগে বিল্ডারের খোঁজ করে । আমরা সবসময় চেষ্টা করি সেরা মান বজায় রাখতে। এজন্যই আমাদের রেফারেন্স সেল বেশি হয়। এটার বাইরে আমরা ট্র্যাডিশনাল ডিরেক্ট সেল করছি, নতুন করে ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করেছি, এখনও খুব বড় আকারে এটিএল অথবা বিটিএল মার্কেটিং করছিনা তবে আমরা নিশ মার্কেটিং করে থাকি। আমরা ছোট ছোট টার্গেট ওরিয়েন্টেড কমিউনিটির সাথে ক্লোজলি কাজ করি বিভিন্ন ওয়ার্কশপ এবং কনফারেন্স আয়োজনের মাধ্যমে।

বিনির্মাণ

গত আড়াইবছর যাবত এই বিজনেসের সাথে আছেন। এতদিন কাজ করে কি কি বিষয় শিখতে পারলেন?

ইমদাদ হোসাইন খান

তিন বছরের কিছুটা কম সময়ে শিখাটা একেবারে খুব কমও নয় । নতুন একটা বিজনেস শুরু করে সেটাকে সামনে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে একটা বাচ্চা জন্ম দিয়ে তাকে বড় করার মত। প্রথম বছরে আমাদের কিছুই ছিলোনা, অনেকটা সাগরে ভাসছিলাম আমি এবং আমাদের তিন ডিরেক্টর । আরেকজনের অফিসে চারশত স্কয়ার ফিটের একটা ভাড়া জায়গায় বসতে হত। সেখানে আমরা ঠিকভাবে বসতেও পারতাম না, আবার বসতে পারলে ডিজাইনের কাজ করা যেত না। আমাদের শুরুটা হয়েছিলো চার জনের পরিবার নিয়ে। এখন সেটা বিয়াল্লিশ জনের বেশ বড় একটি পরিবার । যখন আমরা প্রোজেক্ট এক্সিকিউট করি তখন দুই থেকে আড়াইশত জনের পরিবার হয়ে যায়।

আমাদের প্রতিটা দিনই ছিলো যুদ্ধের মত এবং প্রতিটা দিনই আমাদের কিছুনা কিছুতে বিজয় অর্জন করতে হতো। প্রতিটা দিনেই আমাদের  অসংখ্য সমস্যার সম্মুখীন হওয়া লাগতো। এমন কোনো বাধা নেই যেটা আমরা ফেইস করিনি প্রোজেক্ট সফলভাবে শেষ করার ক্ষেত্রে।

আমাদের প্রতিটা দিনই ছিলো যুদ্ধের মত এবং প্রতিটা দিনই আমাদের কিছুনা কিছুতে বিজয় অর্জন করতে হতো। প্রতিটা দিনেই আমাদের  অসংখ্য সমস্যার সম্মুখীন হওয়া লাগতো। এমন কোনো বাধা নেই যেটা আমরা ফেইস করিনি প্রোজেক্ট সফলভাবে শেষ করার ক্ষেত্রে। আমাদের সাইটে এক্সিডেন্ট হয়েছে, আগুন লেগেছে, ঝড়ে জিনিশ নষ্ট হয়েছে, চুরি হয়েছে কিন্তু সময় মত প্রোজেক্ট ডেলিভারি থামাতে পারেনি।  প্রথম দিকে আমরা কোন কাজ পেতাম না, এমন কি ছোট কাজও না । কারন আমাদের কোনো রেফারেন্স ছিলোনা, পূর্বে  কাজের অভিজ্ঞতা ছিল না । কোনো ক্রেডিবিলিটি ছিলোনা আমাদের। তাই আমাদের কেউ বিশ্বাসও করতো না, কেউ আমাদের সময়ও দিতোনা। প্রতিটা দিনই ছিলো আমাদের জন্য সারভাইভাল । প্রথম বছর যাওয়ার পর আস্তে আস্তে আমরা পথ খুঁজে পেতে শুরু করি । আমাদের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং চেয়ারম্যান কখনও আশাহত হননি । প্রতি নিয়ত আমরা পরিশ্রম করেছি সততার সাথে আর সেটাই আমাদের আজ পথ দেখাচ্ছে। আশা করছি,  সামনে আরো মসৃণ হবে আমাদের এই পথচলা ।

বিনির্মাণ

আপনার কোম্পানির ডিফিকাল্ট সিচুয়েশনটা কিভাবে ডিল করেন?

ইমদাদ হোসাইন খান

আমরা যখন কোম্পানিটা শুরু করি তখন আমাদের একটা স্বপ্ন ছিলো। আমাদের  আসলে মানসিকভাবে একটা জিনিস খুব পুড়াচ্ছিলো যে আমরা দেশের জন্য কিছু করতে পারছিলাম না। আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো দেশের জন্য কিছু একটা করতে হবে।

আমরা যখন কোম্পানিটা শুরু করি তখন আমাদের একটা স্বপ্ন ছিলো। আমাদের  আসলে মানসিকভাবে একটা জিনিস খুব পুড়াচ্ছিলো যে আমরা দেশের জন্য কিছু করতে পারছিলাম না। আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো দেশের জন্য কিছু একটা করতে হবে। এখন যখন  আমরা দেখি আমাদের তৈরি করা কারখানায় কয়েক হাজার মানুষ কাজ করছে যাদের উপর তাদের পুরো পরিবার নির্ভরশীল, একজন উদ্যোক্তা লাখ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করতে পারছেন আগের চেয়ে ভালোভাবে, তখন আমাদের খুব গর্ব হয় যে আমরা কিছু মানুষের জীবনে ইমপ্যাক্ট ফেলতে পেরেছি। দেশের ইকোনোমিতে সরাসরি অবদান রাখার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারছি । এটাই আমাদের প্রতিদিনের কঠিন সময়ে ভালোভাবে নিজের কাজ করার অনুপ্রেরণা যোগায়।

বিনির্মাণ

উদ্যোক্তা কিংবা উদ্যোক্তা হতে চাওয়া মানুষদের জন্য আপনার কি পরামর্শ?

ইমদাদ হোসাইন খান

তাদের জন্য আসলে আমার দুইটা পরামর্শ-

ক- প্রথমে মার্কেটকে মাথায় রেখে একটি প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস বেছে নেয়া এবং সম্পূর্ণ মনোযোগ সেটাতে দেওয়া।

খ- ভালো সেলসম্যান হওয়া ।

বিনির্মাণ

আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে ভালো সেলসম্যান কিভাবে হওয়া যায়?

ইমদাদ হোসাইন খান

আমাদের দেশে সেলসম্যান হওয়া সবচেয়ে ডিফিকাল্ট জব গুলোর একটি। কারন এখানে মিউচুয়্যাল রেস্পেক্টের জায়গাটা খুব দুর্বল। সে কারনে আসলে সেলসম্যান কেও হতে চান না। দ্বিতীয়ত, সেলস নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গ্রাজুয়েটের খুব একটা ধারণা থাকেনা বলেই চলে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই সেলসকে পছন্দ করেনা। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে মার্কেটিংয়ে পড়াশুনা শেষ করে সেলসেই তাদের চাকরি শুরু করতে হয়।

সেলস নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গ্রাজুয়েটের খুব একটা ধারণা থাকেনা বলেই চলে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই সেলসকে পছন্দ করেনা। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে মার্কেটিংয়ে পড়াশুনা শেষ করে সেলসেই তাদের চাকরি শুরু করতে হয়।

আমি অস্ট্রেলিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে এসে সেলসম্যান হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করি। কিন্তু আমি আসলে সেলস এর কিছুই  তখন জানতাম না। আমার থিওরি হচ্ছে যা আমি না পারি সেটা নিয়েই ডুবে থাকি। ক্যারিয়ারের শুরুতে আমি গুলশানের যত গুলো অফিস আছে সেগুলোতে সরসরি গিয়ে গিয়ে বিক্রি করার চেষ্টা করতাম । প্রায় নব্বই ভাগ ক্ষেত্রে রিসিপশনিস্টরা আমাকে ঢুকতে দিতোনা। তাদের কনভিন্স করে অফিসে প্রবেশ করা আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল । অনেক ক্ষেত্রে কনভিন্স করতে পারলেও কোম্পানীর ম্যানেজারদের সাথে আমি কি কথা বলবো সেটা নিয়েও কনফিউশনে থাকতাম। টানা একবছর এভাবে পরিশ্রম করি।

প্রতিদিন বাসায় ঢুকার পর দেখতাম আমার শার্টে ঘামের কারনে সাদা সাদা লবন বসে গেছে। আব্বু জানতে চাইতো অফিসে এসির নিচে থেকেও কেনো এরকম ঘর্মাক্ত। আমি শুধু মুচকি হাসতাম। সব সত্যি তো বাবা মাকে জানানো যায় না।

প্রতিদিন বাসায় ঢুকার পর দেখতাম আমার শার্টে ঘামের কারনে সাদা সাদা লবন বসে গেছে। আব্বু জানতে চাইতো অফিসে এসির নিচে থেকেও কেনো এরকম ঘর্মাক্ত। আমি শুধু মুচকি হাসতাম। সব সত্যি তো বাবা মাকে জানানো যায় না। বাসায় যখন ছিলাম তখন ভাবতাম কোন কোন জায়গায় আমার দুর্বলতা ছিলো সেগুলো কিভাবে ওভারকাম করা যায়। রাস্তায় হাটতে গিয়ে, মাঠে ব্যায়াম করতে গিয়ে মানুষদের কনভিন্স করার নিজের বিভিন্ন থিওরি গুলো  প্রয়োগ করতাম। তাও আমি নিজের প্রতি সন্তুষ্ট ছিলাম না। ভাগ্য আমার দিকে মুচকি হাসলো এত পরিশ্রম করার সুবাদে। আমি একজন মেন্টর পাই।  উনার কাছ থেকেই আসলে আমি সেলস্ শিখি হাতে কলমে। কিভাবে সেলস কল করতে হয়, ফলো আপ করতে হয়, ডিল ক্লোজ করতে হয়, কমপ্লেইন রিসিভ করতে হয়, অব্জেকশন রিকভার করতে হয়। আমার মতে একজন ভাল সেলসম্যান হতে তিনটা জিনিশ দরকার। যথেষ্ট পরিশ্রম করার মানসিকতা, সৎ ও বুদ্ধিমান হওয়া এবং একজন ভালো মেন্টরের কাছ থেকে শেখা । এই সেক্টরটায় প্রতিদিনই শিখার সুযোগ আছে এবং একজন ভালো সেলসম্যান হতে হলে এভ্রিডে ইজ আ লার্নিং পিরিয়ড। এই শিখাটা হতে হবে  প্রোডাক্ট, লিডারশিপ, ক্লাইন্ট হ্যান্ডলিং, সাইকোলজি রিডিং, সেলস ম্যানেজমেন্ট এবং ডেফিনিটলি ওয়ার্ক এথিক আসপেক্টে। কেউ সেলস না শিখে ভালো সেলসম্যান হতে পারবেনা। তাই একজন ভালো মেন্টরের কাছ থেকে সেলস কিভাবে করতে হয় তা শিখা উচিৎ।

বিনির্মাণ

আপনি কিভাবে সেলসের দক্ষতা বাড়ালেন?

ইমদাদ হোসাইন খান

আমি আমার চাকরির শুরু থেকেই একটা বিষয় ফিল করতাম যে আমি ভালো সেলসম্যান নই । কেউ যদি কোনো কিছু শিখতে চায় এটা তার জন্য বুঝা জরুরী যে সে আসলে এটায় পারদর্শী নয়। কারণ তা না হলে তার জন্যে শিখা কষ্টকর হয়ে যাবে। আমি এখনো শিখছি এবং এটাই আমার সিক্রেট । আমি সবার কাছ থেকে শিখার চেষ্টা করি । আমি আমার কলিগদের কাছ থেকে, বস এবং জুনিয়রদের কাছ থেকে,অনলাইনে বিভিন্ন কোর্স করে, ইউটিউবে ভিডিও দেখে এবং মূলত প্রচুর বই ও গ্লোবাল ম্যাগাজিন পড়ার মধ্য দিয়ে প্রতিনিয়ত শিখি এবং আপডেটেড থাকার চেষ্টা করি।

বিনির্মাণ

একজন সেলসম্যানের মূল উইপন হলো সেলস পিচ দেয়া। আমরা কখন একটা পিচকে বেস্ট বলবো?

ইমদাদ হোসাইন খান

একটি ভালো সেলস পিচের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি খুব বেশী সময় নিবেনা কারন বড় বড় কোম্পানীর ডিসিশন মেকারদের হাতে কখনই বেশী সময় থাকেনা।

একটি ভালো সেলস পিচের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি খুব বেশী সময় নিবেনা কারন বড় বড় কোম্পানীর ডিসিশন মেকারদের হাতে কখনই বেশী সময় থাকেনা। প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস অফারটি অন্যান্যদের চেয়ে কতটা ভিন্ন সেটা খুব ক্লিয়ার থাকবে যেন সহজে  তা বুঝা যায় । যে সেলস পিচ দিচ্ছে তার সাথে কাজ করার মধ্য দিয়ে অন্য কোম্পানীটি কি কি ভাবে উপকৃত হতে পারবে সেটা দেখাতে হবে খুবই সহজ এবং সাবলীল ভাষায় । সব শেষে একটি সিদ্ধান্তে যেতে সহযোগিতা করতে হবে ক্রেতাকে।

বিনির্মাণ

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

ইমদাদ হোসাইন খান

আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে উদ্যোক্তাদের আরো ভালোভাবে ব্যবসা করার স্বপ্নকে সফল করার ক্ষেত্রে এখনকার চেয়ে আরও সময় উপযোগী সার্ভিস দেয়া। সেই জন্য আমরা বিভিন্ন গ্লোবাল পার্টনারদের সাথে ইতোমধ্যেই কাজ করা শুরু করেছি।  ব্যবসার পরিধি দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া এবং একটি বহুজাতিক কোম্পানীতে রূপান্তর করা আমাদের এখন মূল লক্ষ্য।  আগামি পাঁচ বছরের মধ্যে কোম্পানীকে এমন একটা অবস্থানে আমি নিয়ে যেতে চাই যেখানে অনেক দেশের অনেক মানুষ তাদের স্বপ্ন পূরণ করার সুযোগ পাবে।

বিনির্মাণ

ধন্যবাদ আপনাকে বিনির্মাণকে সময় দেওয়ার জন্য।

ইমদাদ হোসাইন খান

আপনাকেও অ্যাডভেন্ট স্টিল এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এর পক্ষ থেকে অশেষ ধন্যবাদ।