যুক্তরাষ্ট্রে করা সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে নব্বই শতাংশ স্টার্টআপ অংকুরেই বিনষ্ট হয়। মাত্র দশ শতাংশ ব্যবসা নিয়ে উদ্যোক্তাগণ স্বপ্ন দেখতে সক্ষম হন। কিন্তু সেই হারটা আরো কমে যায় যদি বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশ সমূহে ব্যবসা দাড় করানো হয়। একটি ভেঞ্চার ব্যর্থ হওয়ার পিছনে অনেক কারণই বিদ্যমান। সে বিষয়টিই সামনে নিয়ে এসেছেন এসএসএল কমার্জের প্রধান নাওয়াত আশেকিন। মিঃ আশেকিনের স্টার্টআপ নিয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অনেক দিনের। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি বিজনেস ব্যর্থ হওয়ার কয়েকটি কারণ তুলে ধরেছেন।
এম নাওয়াত আশেকিনের মুখেই শুনা যাকঃ
“বেশিরভাগ সময়েই স্টার্টআপ গুলো ব্যর্থ হয় কারণ উদ্যোক্তাগণ বিক্রি করার চেয়ে পণ্যের দিকে বেশি গুরুত্ব দেন। আমার প্রথম বিজনেসটার ব্যাপারও ঠিক একই রকম। আমি খুব বেশি গুরুত্ব দেইনি সেলসের উপর। বরং আমি আমার পণ্য তৈরি এবং অপারেশন নিয়ে আবিষ্ট ছিলাম। এমনটিই ঘটে বেশির ভাগ উদ্যোক্তার প্রথম দিকে। তারা সেলসকে অগ্রাধিকার দেয় না বরং নিজেদের আইডিয়া নিয়ে উদ্দিপ্ত থাকে। এবং তারা ব্যর্থ হয়।
তারপরে যে বিষয়টি একটি বিজনেসের পতনকে তরান্বিত করে তা হচ্ছে ভীতি। ভীতিই আমাদেরকে ব্যক্তিগত খ্যাতি কিংবা ব্রান্ড ভ্যালুর ছদ্মবেশে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা হতে বিরত রাখে। আমরা আসলে ভয় পাই দুইটি জিনিশে। প্রথমত, নিজেদের সম্পর্কে আমাদের চিন্তা ভাবনা হচ্ছে আমরা অনেক বড় কিছু হয়ে গিয়েছি। আমরা ভয় পাই, যদি বিজনেস ভালো ভাবে পরিচালনা করতে না পারি কিংবা অভিভূত করার মত কিছু করতে না পারি তা হলে বিপত্তিতে পতিত হব। এই আশঙ্কাই আমাদেরকে সামনে চলতে বাঁধা দেয়। আমরা সিদ্ধান্ত নিতে এবং কাজ করতে পিছিয়ে পড়ি। আমরা অঙ্গীকার করতে ভয় পাই যদি সেটা ডেলিভারি করতে না পারি সেই আশঙ্কায়। এটা আমাদেরকে সেলস করা কিংবা সমস্যা মোকাবেলায় অনুৎসাহিত করে। পরিশেষে ব্যর্থতার কাতারে নেমে আসি।দ্বিতীয়ত, আমরা আমাদের নিজেদের ভ্যালুর সাথে কোম্পানীর ভ্যালুকে গুলিয়ে ফেলি। এরফলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করি। এমনকি আমরা কাজ করতেও ইতস্তত বোধ করি।
তারপরে যে কারণটি স্টার্টআপের ব্যর্থতার জন্য দায়ী তা হলো দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভুল কৌশল প্রয়োগ। ভেঞ্চার গুলো সাধারণত প্রাইস নির্ধারণের ক্ষেত্রে অনেক বেশি হুশিয়ার হয়। যখনই কোন প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে তারা পদক্ষেপ নেয় প্রাইস কমিয়ে। আমাদের দেশের উদ্যোক্তাগণ মনে করেন কাস্টমারগণ প্রাইস সেন্সিটিভ। দাম কমিয়ে দিলেই আমার থেকে পণ্য কিনা শুরু করবে। কিন্তু আদতে সেটা নয়। আপনার স্টার্টআপ যথেষ্ট ছোট, সুতরাং আপনার ছোট অপারেশনের চেয়ে প্রফিট মার্জিন বেশি হওয়া উচিৎ। যদি আপনার প্রফিট মার্জিন কম হয় তবে আপনি আসলে মূলধনেই টান দিচ্ছেন। এবং তার শেষ ফল হচ্ছে বিজনেস থেকে নিজেকে উঠিয়ে নেওয়া।
ফিন্যান্সিয়াল জ্ঞানে ঘাটতি থাকাও একটা নতুন ব্যবসা নষ্ট হওয়ার কারণ হতে পারে। বেশির ভাগ উদ্যোক্তাই তাদের ব্যবসা শুরু করে প্রচুর পরিমাণে ফিক্সড কস্টে বিনিয়োগ করে। অথচ তাদের উচিৎ ছিলো ভালো কাস্টমার সার্ভিস ব্যবস্থাপনা, পণ্য ডেলিভারি এবং কাজের পরিবেশ ও স্টাফ নিয়োগে বেশি মনোযোগ দেওয়া। কারণ আপনি যতই ফিক্সড কস্ট বাড়াবেন তত দ্রুতই রিজার্ভে টান পড়বে।
যখন আপনি কোন বিজনেস শুরু করেন সবকিছু আপনার নিজেকে দিয়েই করতে হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত কোন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া উচিৎ হবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি ক্লান্ত না হন। আপনি যদি বিপরীতটা করেন তবে ব্যর্থতার ঝুঁকি নিচ্ছেন।
যখন আপনি কোন বিজনেস শুরু করেন সবকিছু আপনার নিজেকে দিয়েই করতে হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত কোন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া উচিৎ হবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি ক্লান্ত না হন। আপনি যদি বিপরীতটা করেন তবে ব্যর্থতার ঝুঁকি নিচ্ছেন।
সর্বশেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ফোকাস। উদ্যোক্তাদের প্রথম দিকে খুব সহজেই মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। তারা একই সাথে অনেক কিছু করতে চায়। প্রফিট বাড়াতে কোন কিছুর প্রচেষ্টাই বাদ রাখেনা। এটা আসলে আত্মহত্যার শামিল এবং পরিশেষে একটি স্টার্ট আপকে ধংস করে দেয়।“
মিঃ নাওয়াত আশেকিনের মতে খুঁটিনাটি এই বিষয় গুলো এড়িয়ে চলতে পারলেই আমাদের দেশে ব্যবসা করা সম্ভব। কিন্তু বেশিরভাগ উদ্যোক্তাই এটা করতে পারেনা। আপনি যদি ব্যবসায় নামতে ইচ্ছুক থাকেন তবে এ ব্যপার গুলো লক্ষ্য রাখুন। সাফল্য আসবেই।